for Add
নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭ এপ্রিল ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ২২:০৫:৪৬
১২ মার্চ, চট্টগ্রামে যে দিন বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে), সেদিন ঢাকার একটা হোটেলে ‘বাঁচাও ফুটবল’ব্যানারে জড়ো হয়েছিলেন একদল সংগঠক ও প্রাক্তন ফুটবলার। যার নেতৃত্বে ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের দীর্ঘদিনের বন্ধু মনজুর কাদের। ফুটবলের পরিবেশটা উত্তপ্ত হয় আসলে সেদিন থেকেই। কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাফুফের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ ছিল তাদের, আছে এখনো। বিভিন্ন সময় ‘বাঁচাও ফুটবল’আন্দোলনকারীরা কাজী সালাউদ্দিন ও তার নির্বাহী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তার প্রতিক্রিয়া এতদিন চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) কাজী মো. সালাউদ্দিন সব অভিযোগের জবাব দিয়েছেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। তবে জবাব তিনি দিয়েছেন আনুষ্ঠানিকভাবে, সংবাদ সম্মেলন করে। একই সঙ্গে তিনি আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য বাফুফের সভাপতি পদে আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিরোধী পক্ষকেও আহবান করেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে। নির্বাহী কমিটির বেশিরভাগ কর্মকর্তার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধি, জেলা প্রতিনিধিও ছিলেন অনেক। বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়ের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে কাজী সালাউদ্দিন দীর্ঘ বক্তব্যে তার সময়কার সাফল্যের কথা তুলে ধরার পাশপাশি অভিযোগকারীদের বিভিন্ন মন্তব্যের জবাবও দেন।
কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেছেন,‘অভিযোগ করা হয়েছে আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে নাকি ফিফা-এএফসির টাকা জমা হয়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, যারা এ সব অভিযোগ করেছেন তাদের প্রমান দিতে হবে। যদি দেশ এবং দেশের বাইরে আমার এমন কোনো ব্যাংক হিসেবে থেকে থাকে যেখানে ফিফা-এএফসির অর্থ জমা হয়, তা প্রমান হলে আমি জেল খাটতেও রাজী। আর প্রমান করতে না পারলে অভিযোগ যারা করছেন তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।’
‘৮ বছরে আমার অধীনে ফুটবলে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে ব্যর্থতা ছিল। যা আমি স্বীকার করি। আর এবার নির্বাচিত হলে জাতীয় দলের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে দেব। কোচ নিয়োগ দেয়ার আগে নিয়োগ দেবো কনসালট্যান্ট’-বলেছেন বাফুফে সভাপতি।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন,‘ফিফার কাছে গত ৩ মাস আগে সব রকমের অডিট রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। যে অভিযোগ ছিল একাডেমির অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করা হয়নি এর ব্যাখ্যা ফিফাকে দেয়া হয়েছে। ফিফা দুই-এক বছর পর পরই হঠাৎই তাদের পছন্দমতো কোন একটা দেশকে বেছে নেয় অডিটের জন্য। উদ্দেশ্য, সেই দেশের ফুটবল ফেডারেশন কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে কি না, তা বের করা। কোন অনিয়ম খুঁজে পেলে ফিফা সে দেশকে আর কোন আর্থিক অনুদান দেয় না। ফিফা একটা সংস্থাকে এবার সে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা বাংলাদেশে এসে ২৩ দিন ধরে তদন্ত করে গেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফিফা বাফুফেকে আবারও টাকা পাঠিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ফিফার যে এপ্রুভেল লেটার, সেটা আমি পকেটে নিয়ে ঘুরছি আপনাদের দেখানোর জন্য। তাহলে আপনারাই বলুন, আমি চোর হলাম কি করে?’
সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘তারা যে ভাষায় কথা বলেছেন, একটা সভ্য দেশে সেগুলো কেউ বলতে পারে না। এটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ভেবেছিলাম এগুলো এড়িয়ে যাব। এতে সবাই ধরে নিয়েছিলেন, আমি দোষী ও দুর্বল। কিন্তু আমি তা নই। এখন পরিস্থিতির কারণে আর মুখ না খুলে পারলাম না। আমি এগুলো নিয়ে কবারই বলবো। গালাগালি আমিও কারো চেয়ে কম জানিনা। কিন্তু কাউকে গালাগালি করি না। কারণ বাবা-মা সে শিক্ষা আমাকে দেননি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে খেলেছি। সেখানে আমার অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। এই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিও আমার বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছেন। একটা কথা না বলে পারছি না। গত নির্বাচনে তিনি আমার বিপক্ষে নমিনেশন পেপার কিনে জমা দিয়েছিলেন। চারদিন পরে তিনি আমাকে ফোন করে জানান, তার মনোনয়নপত্রে তথ্যগত কিছু ভুল করেছেন। আমি যেন নির্বাচন কমিশনকে বলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিই। তবে এক শর্ত তিনি দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল আমাকে তার সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য করতে হবে। তাহলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। আমি বলেছিলাম, আমি টাকা দেব, তবে নির্বাচনও করেন। আমি ঠিকই তাকে টাকা দিয়েছিলাম। এরপর তিনি তার ভাই মঈনকেও আমার কাছে পাঠান। চোখের অপারেশনের জন্য তার টাকা চাই। দিলাম টাকা। অপারেশনের পর এসে আবারও এল টাকা চাইতে। দিয়েছিও। কদিন আগে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আইনুলকে অর্থ সাহায্য করেছি অনেক সমস্যার পরেও। আইনুল এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। মজার ব্যাপার-আইনুলকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন জাকারিয়া পিন্টু!’
কাজী সালাউদ্দিন জাতীয় দলের সাকেব দুই ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু ও গোলাম সারোয়ার টিপু সম্পর্কে বলেন, ‘টিপু ভাইকে আমিই জাতীয় দলের কোচ করে এনেছিলাম। তিনি আমার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, তার বেতন বাড়িয়ে দিতে। দিয়েছিলাম। তাও দ্বিগুণ! কিন্তু তিনি দল নিয়ে ব্যর্থ হওয়াতে তাঁকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। শেখ কামালের সঙ্গে বেয়াদবি করায় মঞ্জুকে আবাহনী থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তিনি মোহামেডানে চলে যান। মোহামেডান ক্লাবে আমার পার্ক করা গাড়ী হকি স্টিক দিয়ে ভাংচুর করে এবং হুমকি দেয়, ‘বঙ্গবন্ধু আর শেখ কামাল গেছে, এইবার সালাউদ্দিনরে পিটা! এই হলো সেই মঞ্জু। অনেকদিন পর তিনি আমার বাসায় এসে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন। এই দুই জন এখন আমার বিষোদগার করছেন। আমার প্রশ্ন হলো, তারা ফুটবলের জন্য এতদিন কি করেছেন?’
সালাউদ্দিন আরও যোগ করেন, ‘আমি নাকি বাজার করতে সকালে বাফুফেতে আসি। এ কথা বলে তারা আসলে দেশের ফুটবলকে হেয় করছে। আমি দুর্নীতিবাজ হলে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনে টানা আট বছর সভাপতি হিসেবে কাজ করতে পারতাম না। এখনও সেই দায়িত্বে আছি। অনেকেই আজ ফিফা স্ক্যান্ডালে বহিস্কৃত, এক সালাউদ্দিন ছাড়া।’
‘আমি যখন প্রথম দায়িত্ব নেই তখন খেলার জন্য ফুটবলাররা আন্দোলন করেছিল। এখন ফুটবলাররা ৫০-৬০ লাখ টাকা পাচ্ছে। জেলা ফুটবল হয়েছে অধিকাংশ জেলায়। বাফুফে জেলা ডিএফএগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, যা বাফুফের ইতিহাসে এই প্রথম। জেলা ফুটবল নিয়ে যিনি আজ অভিযোগ করছেন, তিনিই কিন্তু এই দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে কি ব্যর্থতার দায়ভার তার ওপর বর্তায় না? অথচ কিভাবে এই টাকা আমরা জোগাড় করি, সেটা কেউ বলে না। ফুটবলের জন্য টাকা আনতে তো সারাদিনই ভিক্ষে করি, চুরি করার সময় কোথায়! বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাফ অঞ্চলে আমাদের ছেলে-মেয়ে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একটি ক্লাব আমাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অথচ গত-সাত আট বছরে তারা নতুন কোন খেলোয়াড় সৃষ্টি করেনি। তাদের কোন পাইপলাইন নেই। তারা কোন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলে না’-বলেছেন কাজী সালাউদ্দিন।
For add
For add
For add
For add
for Add