রবার্ট জেমস ববি ফিশার_ এই নামের চেয়ে বরং বিশ্ব দাবায় তিনি ববি ফিশার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সত্তর দশকে দাবার দুনিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। ছিলেন একজন আক্রমণাত্বক কৌশলী দাবাড়ু্। ছৌষট্টি খোপের দাবার জমিনে সেসময় তিনি ছিলেন দাবা বোর্ডে এক আতঙ্কের নাম।
শুধু তাই নয়, ১৯৭২ সালে তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খ্যাতিমান সোভিয়েত দাবাড়ু বরিস স্পাস্কিকে হারিয়ে প্রথম মার্কিনী হিসেবে ববি ফিশার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দারুণ হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। সেসময় দাবা বোর্ডের এই যুদ্ধকে মার্কিন-সোভিয়েত যুদ্ধ হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল। যে কারণে বিশ্ব দাবার লড়াইটি ভীষণ সারা জাগিয়ে ছিল।
দাবার বরপুত্র ববি ফিশার ১৯৪৩ সালের ৯ মে শিকাগো শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রুকলিনে। তার যখন ছয় বছর বয়স তখন তার বোন জোয়ান তাকে একটি দাবা সেট কিনে দিয়েছিলেন। বোনের কাছেই তার দাবার হাতেখড়ি হয়। সেই থেকেই দাবার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। সেটের সঙ্গে আসা নির্দেশমালাগুলো দেখে দেখে খুদে ববি ফিশার খুব দ্রুত দাবার চালগুলো শেখে ফেলেন।
তারপর বাসায় যিনিই বেড়াতে আসতেন তার সঙ্গেই দু চার গেম খেলার চেষ্টা করতেন। আর সুযোগ পেলেই দাবা বোর্ড সাজিয়ে বোনের সঙ্গে খেলতে বসে যেতেন। এভাবেই তার দাবা চর্চা শুরু হয়েছিল।
শুধু কী তাই! মাত্র ১২ বছর বয়সেই ফিশার সবাইকে চমকে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুব আসরে শিরোপা জয় করেন। এর পর ১৪ বছর বয়সে জেতেন জাতীয় শিরোপা। এমন কী দেশের মাটিতে তিনি যতবারই খেলেছেন ততবারই শিরোপা জিতেছেন। কখনো দ্বিতীয় হননি ফিশার।
তবে প্রথম মার্কিনী হিসেবে ববি ফিশার বড় চমক দেখান ২৯ বছর বয়সে। ১৯৭২ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্যে ভেঙে বিশ্বসেরার খেতাব জিতে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেন।
১৯৭২ সালে ফিশার তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন খ্যাতিমান সোভিয়েত দাবাড়ু বরিস স্পাস্কিকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। আইসল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটিকে শতাব্দীর সেরা ম্যাচ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কিন্ত ১৯৭৫ সালে বিশ্ব দাবায় সোভিয়েত চ্যালেঞ্জার আনাতোলি কারপভের সঙ্গে খেলতে নেমে নানা অদ্ভুত শর্ত জুড়ে দেন ফিশার। যে কারণে ফিশার-কারপভ খেলা বোর্ডে গড়ায়নি। এর পর টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আর কোনো ম্যাচই খেলেননি।
তবে ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফিশার আবার স্পাস্কির মুখোমুখি হন সার্বিয়ায়। ফলশ্রুতিতে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। তবুও দাবা সিরিজ চালিয়ে যান। ১৭ বছর পর বোর্ডে নেমে আবারো তিনি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন স্পাস্কিকে হারিয়ে।
এর পর আবারো দাবা থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। দাবা জগতে তাকে রহস্যময় দাবাড়ু হিসেবেই অভিহিত করা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ৬৪ বছর বয়সে আইসল্যান্ডের রেইকাভিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। যেখান থেকে কেউ কোনো দিন আর ফেরে আসে না।
ব্যক্তিগত জীবনে ববি ফিশার ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। যা ভাবতেন তাই করতেন। কখনোই তিনি সিরিয়াসভাবে খেলেননি। তবুও অল্প সময়ের জন্য বিশ্বজুড়ে দারুণ হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। দাবায় নানা শর্ত জুড়ে এনেছিলেন ভিন্নমাত্রা। তিনি যদি দাবা জগতে রহস্যময় আচরণ না করতেন তাহলে হয়তো দীর্ঘদিনই তার মাথায় বিশ্ব দাবার মুকুট শোভা পেতো।