for Add

খাদের কিনারা থেকে হকিকে টেনে তুলছেন এই বরেণ্য সংগঠক

একটা সময় হকিও দারুণ জনপ্রিয় খেলা ছিল। সেসময় ক্রিকেটও এতো জনপ্রিয় ছিল না। অথচ কালের আর্বতে এই জনপ্রিয় খেলাটি প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিল। ঘরোয়া হকি যখন খাদের কিনারায়- ঠিক তখনই বহুল আলোচিত নির্বাচনের মাধ্যমে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবর্তীণ হন ক্রীড়া অন্তপ্রাণ বরেণ্য সংগঠক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। তার জাদুর স্পর্শে গত চার বছরে ঘরোয়া হকি আন্তর্জাতিক আঙিনায় যেমন সাফল্যেয় উর্ধ্বমুখি ছিল, ঠিক তেমনিভাবে স্থানীয় পর্যায় খেলাটি নতুন করে প্রাণ ফিরে স্বপ্নের জাল বুনেছে। সবকিছু মিলিয়ে হকিকে দারুণ এক ছন্দে ফেরানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান হকি ফেডারেশনের অন্যতম সহসভাপতি এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। ডেইলিস্পোর্টস২৪.কম- কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন হকি নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : আচ্ছা, হকিতে আপনার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : দেখুন, আমি দীর্ঘদিন ধরে হকি অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করছি। এক সময় আমি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সহসভাপতি ছিলাম। দীর্ঘদিন পরে যখন ২০১৯ সালে বহুল আলোচিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো- সেই নির্বাচনে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে আসি। আমি স্পোর্টসটা মন দিয়ে করি, আত্মা থেকে করি, ভালবেসে করি। দেশের জন্য স্পোর্টসটা করি। সম্ভাবনাময় এ খেলাটিকে কিভাবে ডেভেলপ করা যায়, সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরুতে নারী হকিটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। আমাদের সময়কাল থেকেই কিন্তু এই দেশে নারী হকির জাগরণ শুরু হয়। এরপর অনূর্ধ্ব-২১ দল নিয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। এই দলটি এখন জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে জায়গা করে নিতে চেষ্টা করছে। জাতীয় দলকে বিদেশী কোচের তত্বাবধানে রেখেছি। তারাও কিন্তু সম্প্রতি সময় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়েছে। এমন কি একটা সময় ঘরোয়া হকি লিগও অনিয়মিত ছিল। সেটাও কিন্তু নিয়মিত মাঠে রাখার চেষ্টা করছি। শুরুটা আমি এভাবেই করেছিলাম। আমি সব সময় বলি, কোনো ভিশন না থাকলে কোনো মিশনে যাওয়া যায় না। আমি সেভাবেই ঘরোয়া হকিটাকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : কেউ যখন নারী হকি প্রচলণে আগ্রহী ছিল না, তখন কেনোই বা এমন দু:সাহসী সিদ্বান্ত নিলেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
আমি কখনো পিছনে ফিরে তাকানোর লোক নই। অতীত এ নিয়ে কি হয়েছে কি হয়নি তা নিয়েও আগ্রহী নই। সব সময়ই চেষ্টা করি নিত্য নতুন ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে। দেখুন, আমাদের ধর্মই কিন্তু একমাত্র নারীকে সর্বোচ্চ সম্মানের স্থানে রেখেছেন। বর্তমানে পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- রাজনীতি বলুন, অর্থনীতি বলুন, খেলাধুলা বলুন, শিক্ষা বলুন আর যাই কিছু বলুন না কেনো- নারীরা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। এখন এই বিষয়টি যদি আমি চিন্তা-চেতনায় না রাখি তাহলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো না। তাই দায়িত্ব পাওয়ার পর দেখলাম নারী হকি বন্ধ রয়েছে। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী একটি ক্যাম্প করি। সেখান থেকে বাছাইকৃত খেলোয়াড় নিয়ে ভারতীয় কোচের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মতো জাতীয় নারী দল গঠনে সক্ষম হই। সেই দলটিই সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের কোনো প্রথম নারী দল হিসেবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। আমি বলবো, আমি সুভাগ্যবান- আমার হাত ধরেই এই দেশে নারী হকির ইতিহাসের রচনা হয়েছে। আমরা সুভাগ্যবান, একটি নতুন দল নিয়ে একেবারে খালি হাতে ফিরিনি। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। বিকেএসপিতে হকি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন অনেক মেয়েরাই এই খেলাটির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।

প্রশ্ন : তাহলে নারী হকির সম্ভাবনা নিয়ে কি ভাবছেন। এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : আন্তর্জাতিক আঙিনায় নারী হকি দল প্রথম অংশগ্রহণে যে দক্ষতার ছাপ রেখেছে সেটির ধারাবাহিক বজায় রাখতে পারলে ভবিষৎতে ভাল ফিডব্যাক পাওয়া যাবে। কিন্তু বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই বছর শুধু নারী হকিই নয়, পুরোবিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতা ছিল। যে কারণে অনেক কিছু করার থাকলেও সেসময়ে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে নারী হকির সম্ভাবনাকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ফেডারেশনের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এখন থেকে শুধু টুর্নামেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবো না। তৃণমূল পর্যায় নারী হকির উন্নয়নকল্পে যা যা প্রয়োজন সেটি করার চেষ্টা করবো। আমার ইচ্ছে খুব শিগগিরই নারী হকি লিগ প্রচলণ করার। এটি করতে পারলে মেয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। হকিরও একটা জাগরণ সৃষ্টি হবে। ক্লাবগুলোর মাধ্যমে মেয়েরা নিয়মিত লিগ খেলার সুযোগ পাবে। এ থেকে তাদের খেলার মানটাও বৃদ্ধি পাবে।

প্রশ্ন : আপনি তো এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো টুর্নামেন্টও এদেশে করেছেন। কিন্তু কি করে এটি সম্ভব করলেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : ‘বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়’ এমন অনেক পুরনো প্রবাদ বাক্য যা দেখবেন এগুলোর শতভাগই জীবন-জীবিকার উপর নির্ভর করে শতভাগ সত্য। ফল দিয়েই তো ফলদ বৃক্ষের নাম জানা যায়। আমি একজন সংগঠক। সংগঠক হিসেবে আমি যদি আমার খেলাটা দেশব্যাপী আলোড়িত করতে না পারি, আন্তর্জাতিক আঙিনায় আমাদের সাংগঠনিক অবস্থানটা মেলে না ধরি- তাহলে তো কোথাও আমার ভিশন-মিশন পৌঁছুবে না। তাই দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনি। আমাদের সামর্থটা বিশ্বপরিসরেও তুলে ধরতে চেয়েছি। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে এশিয়ান হকি ফেডারেশনে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনে আগ্রহী হই। এটি আমার দেশের জন্য নিয়ে আসতে পেরেছি। সুনামের সঙ্গে শেষ করতে পেরেছি। স্বাগতিক দেশ হিসেবে এমন বড় আসরে আমরা খেলতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় স্বার্থকতা আর কি হতে পারে! আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে যদি নিবিড়ভাবে স্পোর্টসের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের জাতীয় পতাকা আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। উনার মতো ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছেন। পরবর্তী লক্ষ্য- দেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা। যা স্মার্ট ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে সাহায্য করবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পথ অনুসরণ করে খেলাধুলাকে সেই লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : ঘরোয়া লিগ প্রসঙ্গে ফিরতে চাচ্ছি। সবধরনের লিগেই একটা লম্বা বিরতি ছিল। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দারুণ একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো। আপনার হাতে এমন কি জাদু ছিল যে, দলগুলোকে মাঠে নামাতে পেরেছিলেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
দেখুন, হকি অত্যন্ত ব্যয়বহুল খেলা। এমন কি ক্লাবগুলোর আয়ের কোনো উৎস নেই। পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও ক্লাবগুলোর জন্য অনুদান নেই। আমি যখন অ্যাডহক কমিটিতে ছিলাম তখনও ক্লাবগুলোকে আর্থিক সমস্যা সমাধান নিরসনে মাঠে ফিরানোর চেষ্টা করেছি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরও সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আসলে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে সবকিছুই সম্ভব। কোভিডের কারণে দুই বছরের মতো লিগ মাঠে ছিল না। তবে সম্প্রতি সেই জটগুলো খুলতে শুরু করেছে। ক্লাবগুলোর আর্থিক সঙ্কটের কারণে আমরা প্রতিটি দলকে অনুদান দিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রথম বিভাগ লিগ সম্পান্ন করেছি। দ্বিতীয় বিভাগ লিগও শেষ করলাম। এরপর প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠে গড়ানোর চেষ্টা করছি। আসলে চেষ্টা করলে কঠিন জিনিসও সহজ হয়ে যায়। একজন সংগঠকের ভেতরে চেষ্টাটা লুকায়িত থাকে। সেই লুকায়িত প্রতিভাকে যদি একজন সংগঠক মনের ভেতর থেকে বের করে আনতে পারেন, তাহলে তার পক্ষে সবকিছু করাই সম্ভব। সেটা খেলোয়াড়দের ভালবাসা দিয়ে মাঠে খেলানো যেমন সম্ভব, তেমননি একটি কমিটমেন্টের মাধ্যমে ক্লাবগুলোকে বোঝানো সম্ভব। কাজেই আমাদের যে গ্যাপটা তৈরি হয়েছিল তা ভালবাসা আর চমৎকার বোঝাপড়ার মাধ্যমে দূরত্বটা কমেছে। যে কারণে সবকিছুই এখন নিয়মিত হচ্ছে।

প্রশ্ন : আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা বলছিলেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- সিংহভাগ ফেডারেশনগুলো যেখানে অনুদান দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা সেখানে আপনাদের আয়ের উৎস না থাকার পরও কি করে পারেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
হকি বলুন আর যেকোনো খেলাধুলাই বলুন না কেনো বাস্তবতার নিরিখে এদেশের ক্লাবগুলোর আয়ের কোনো উৎস নেই। ফলে সারা বছর তাদের আর্থিক সঙ্কট লেগেই রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে আমরা বছরে যে অনুদান পাই তা অফিস স্টাফদের পেছনে চলে যায়। ক্ষেত্রবিশেষ সেখানেও কন্ট্রিবিশন করতে হয়। গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ৩টি লিগের জন্য ৪ বছরে আমাদের ১ কোটি টাকা স্পন্সর করে। বছরে একটি মৌসুম শেষ করতে আনুসাঙ্গিক ব্যয় রয়েছে ৩০ লাখের বেশি। সেখানেও কিন্তু কন্ট্রিবিশন করতে হয়। ফলে যা অনুদান বা স্পন্সর পাই তা ক্লাবগুলোকে সহায়তা করার মতো কিছুই থাকে না। ফেডারেশনের কমিটিতে আমরা যারা রয়েছি তারাই নিজেদের চেষ্টায় একটি ঐক্যমতে পৌঁছে ক্লাবগুলোকে আনুপাতিকহারে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে এক্ষেত্রে উষা ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ সিকদার, আবাহনী লিমিটেডের জাকি আহমেদ রিপন, কিছু ক্লাব ও আমাদের বন্ধুদের ধারস্থ হয়ে ক্লাবগুলোকে আর্থিকভাবে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ভালবাসার হকি মাঠে রাখার জন্য আমরা যে শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি ‘বাচাঁও হকি’ আমরা সেভাবেই হকিটাকে প্রাণবন্ত করে তোলার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : আপনার সময়কালে আন্তর্জাতিক আঙিনায় বাংলাদেশের সাফল্যেটা বেশ উর্ধ্বমুখি। এমন কি, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিয়েও উন্নতি ঘটেছে। সবকিছু মিলে তো দারুণ একটা সময় কাটিয়ে দিলেন। এবার আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কথা শুনতে চাচ্ছিলাম?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ : আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন তাহলে সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারবেন। আর আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তাহলে স্বপ্ন নিয়ে হাঁটতে পারবেন না। আমার স্বপ্ন কিন্তু ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা আমার এই প্রাণের বাংলাদেশ। আমার এই পতাকাকে আমি বিশ্ব হকির দরবারে মেলে ধরতে চাই। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা সবাই চেষ্টা করছি। আমার স্বপ্ন হকি বিশ্বকাপে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। যত দিন না সে লক্ষে পৌঁছুতে পারবো, কিন্তু আমার মনে হয় সেদিন খুব দূরে নয়। আমাদের যে পরিকল্পনাগুলো রয়েছে সেই পরিকল্পনার ফলপ্রসুতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছি। বিশেষ করে খেলোয়াড়রা বিদেশী-দেশী কোচের মাধ্যমে যে উচ্চতর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, মেধার বিকাশ ঘটিয়ে যে সাফল্য দেখিয়েছেন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ওমানে- সত্যিই এক বিরল সাফল্য। এই সাফল্যের ধারা যদি ধরে রাখা যায়, এটি অব্যাহত রেখে নিত্য-নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে স্বপ্নের হকি বিশ্বকাপে খেলা অবশ্যই সম্ভব।

প্রশ্ন : সাফল্য তো ঠিকই পাচ্ছেন। কিন্তু এই সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর খেলোয়াড়রা কতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে করেন?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
সর্বপ্রথম আমি মনে করি একজন সংগঠক হিসেবে আমার যেসব স্পোর্টসে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সেখান থেকে আমি একটি জিনিসই শিখেছি সেটি হচ্ছে- কোচকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। সেই সঙ্গে কোচিং স্টাফ, টেকনিক্যাল স্টাফ, ফিজিও, ভিডিও অ্যানালিস্ট সর্বোপরি ম্যাচ পরবর্তী সংশোধনের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যেসব বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলোকে এক সঙ্গে করতে না পারলে কখনোই আন্তর্জাতিক সাফল্য নিয়ে আসা সম্ভব নয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই সবকিছু করতে হবে। আমি মূলত এসব বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি এভাবে কাজ করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। খেলোয়াড়দের যেসব বিষয় রয়েছে তা হচ্ছে ওদের মনস্তাত্ত্বিক বুঝতে পারা। ওদের খেলার নিশ্চয়তা, আর্থিক নিশ্চয়তা, লিগের নিশ্চয়তা দিতে পারলে ওরা আরো ভাল খেলতে প্রাণবন্ত থাকবে। মনপ্রাণ উজার করে খেলতে পারবে। নিজেদের প্রতিভা বিকাশে আরো উন্নত কলাকৌশলে মনোযোগী হতে পারবে। দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে পারবে। আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি খেলোয়াড়দের এসব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার। বিশেষ করে আর্থিক ও আবাসিক এবং খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ পরিপূর্ণ একটি পরিবার হিসেবে দলকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এই কারণেই আমার মনে হয় আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক এগোতে পেরেছি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আপনি এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি পদে শুধু সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিতই হননি, একই সঙ্গে ঘরোয়া হকির উন্নয়নকল্পে দেশের হকিতে বিশেষ অবদান রাখায় স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়ান হকি ফেডারেশনের অর্ডার অব মেরিট অ্যাওয়ার্ডও লাভ করেছেন। এই দুটি প্রাপ্তির অনুভূতি শুনতে চাচ্ছিলাম। একই সঙ্গে এশিয়া হকির অন্যতম শীর্ষকর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ হকি এ থেকে কতটুকু লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ প্রসঙ্গে কিছু জানাবেন কি?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
আমি বিশ্বাস করি এবং ধারণ করি, আমি এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ কিছু পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘদিন এই হকি বিশ্বে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করে জাতীয় দল যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ও সাফল্য পেয়েছে সেই সাংগঠনিক দক্ষতায় আমরা এশিয়া হকিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। যেখানে আমি সহসভাপতি এবং আমাদের ফেডারেশনের অন্যতম সহসভাপতি আব্দুর রশিদ সিকদার টানা তৃতীয়বারের মতো কার্যনিবার্হী সদস্য হয়েছেন। আমি মনে করি এটা বাংলাদেশ পেয়েছে। আমরা ব্যক্তিরা কেউ পাইনি। তবে হ্যাঁ, এখন আমাদের থেকে সবার একটা চাওয়া-পাওয়ার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরা এখন এশিয়া হকিতে আমাদের বাংলাদেশের টেকনিক্যাল পার্সন ও আম্পায়ারদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আরো বেশি অন্তর্ভুক্ত করতে পারবো। শুধু তাই নয়, জাতীয় দলের জন্য বিশেষ কোচিং ব্যবস্থার সুযোগ করে দিতে পারবো। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বেশি করে নিয়ে আসতে পারবো। এশিয়া হকিতে আমাদের এই সম্পৃক্ততা দেশের হকির জন্য একটি বড় পরিসর সৃষ্টি করবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশকে যেসব বিদেশী রাষ্ট্রগুলো ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন এটা দেশের প্রাপ্তি। এটি আমাদের দেশ পেয়েছে। কোনো ব্যক্তি বিশেষ পাননি। আমরা দেশের প্রাপ্তি মনে করে কিভাবে বাংলাদেশের হকিকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেভাবে আমরা যদি নিরলসভাবে কাজ করতে পারি তাহলে আমাদের মনে হয় আমরা দুই জন ভালভাবে এবং সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারবো।

সবশেষ প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক সাফল্য, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিয়ে উন্নতি- সবকিছুই তো আপনার সময়কালে মিললো। তো আগামী ৪ বছরে এই ঘরোয়া হকি নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?
এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ :
মহান সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামিন আমাকে যদি পুনরায় কাজ করার সুযোগ প্রদান করেন তাহলে বাংলাদেশের হকি নিয়ে আমার যে স্বপ্ন, সেগুলো যদি আমি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে এদেশের হকিকে বিশ্ব হকির দরবারে অন্য এক উচ্চতায় রেখে যেতে পারবো। দেখুন, হকি কিন্তু এখন আর অ্যাস্টোটার্ফে আটকে নেই। সেটি ইনডোরেও চলে গেছে। আমরা এই দুটি ইভেন্টে ইতোমধ্যে অংশগ্রহণ করেছি। খেলার মানোন্নয়নে চেষ্টা করছি। সাফল্য পেয়েছি। শিরোপা জিতেছি। এসবের যোগফল আর পারফরম্যান্স মিলেই কিন্তু আমরা ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিয়ে ভাল জায়গা করে নিয়েছি। আল্লাহপাক যদি আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দেন তাহলে এই র‌্যাঙ্কিংটা সেরা ১৮ তে তুলে আনার চেষ্টা করবো। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করার সর্বাত্বক চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। দেশবাসীর যে প্রত্যাশা- সেই স্বপ্নের হকি বিশ্বকাপে প্রিয় বাংলাদেশকে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো।

সব সংবাদ

বিশ্বকাপ খেলতে চীন যাচ্ছেন তিন আরচার বাংলাদেশের চাওয়া ফুটবল-হকি, আর্জেন্টিনার ক্রিকেট-কাবাডি কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা মোহামেডানের লিগ বর্জনের হুমকি জাতীয় দলে ফেরার জন্য তামিমের ইচ্ছা থাকতে হবে : শান্ত বার্সাকে খুন করেছে রেফারি বাংলাদেশের নতুন স্পিন বোলিং কোচ পাকিস্তানের মুশতাক নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন সাকিব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং প্রকাশ ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আম্পায়ার সেলিম লাকি দেশবাসীকে সাকিব-জ্যোতিদের ঈদ শুভেচ্ছা চ্যাম্পিয়ন্স কাপ থেকে মেসি-মিয়ামির বিদায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ এবাদতের দেশে দেশে তারকা খেলোয়াড়দের ঈদ জাভেদ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে নাকাল করে আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটার মেন্ডিস ৪০ বছর পর কোপা দেল রে শিরোপা জিতলো অ্যাথলেটিক ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে খেলবে টাইগ্রেসরা এমবাপ্পের গোলে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে পিএসজি টি-টোয়েন্টিতেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ আর্জেন্টিনাই শীর্ষে অপরিবর্তিত ব্রাজিল, পিছিয়েছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজও হারল বাংলাদেশ শিরোপার আরো কাছাকাছি ইন্টার মিলান ৪ হাজার রানে ক্লাবে মোমিনুল দেড় মাস পর ফের ফেডারেশন কাপ শুরু অলিম্পিকে রাশিয়া-বেলারুশ অ্যাথলেটদের অভ্যর্থনা জানাবে না প্যারিস নাসরিন একাডেমির ‘রহস্যঘেরা’ চমক যেসব বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অলিম্পিকে খেলতে চান মোহামেডান-আবাহনী উত্তেজনাকর ম্যাচ ড্র ক্রীড়া সংগঠক ইউসুফ আর নেই সাকিবে উজ্জীবিত বাংলাদেশ > লক্ষ্য সিরিজে সমতা খারাপ সময়ে শ্বশুর আফ্রিদিকে পাশে পেলেন শাহিন যখন পারবো না তখন অবসরে যাব : মেসি অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে স্পেনের জয় ছিনিয়ে নিলো ব্রাজিল শ্রীলংকার বিপক্ষে দলে ফিরলেন সাকিব অতিরিক্ত সময়ের রোমাঞ্চে হারলো বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কাছে ৩২৮ রানে হার পেলে থেকে এনড্রিক, ব্রাজিলের দুর্দান্ত ৫ কিশোর বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ ডিফেন্ডারদের দোষ দেখছেন না ক্যাবরেরা অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় হার দিয়ে নারী দলের সিরিজ শুরু ক্রীড়া মন্ত্রীর সাথে সিআরপি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ সহজ গ্রুপে ফ্রান্স, কঠিন গ্রুপে আর্জেন্টিনা শ্রীলংকা টেস্টে বাংলাদেশ দলে একমাত্র নতুন মুখ রানা সাবিনাদের মিয়ানমার সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাফুফের চিঠি বাংলাদেশ নারী অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলকে ক্রীড়া মন্ত্রীর অভিনন্দন ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ বেটিং অ্যাপকাণ্ডে সাকিবের বোনের নাম, যা বলছে বিসিবি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট শুরু

For add

For add

গুরুত্বপূর্ণ কিছু লিংক

For add

For add

for Add